আতা ফলের কিছু অসাধারণ উপকারিতাঃ
![]() |
আতা একটি অতি সুপরিচিত ফল। এতে রয়েছে হরেক রকমের গুণ। শুধু স্বাদের কারণেই নয়, স্বাস্থ্যের জন্য এটি দারুণ উপকারী একটি ফল। ভিটামিন সি এর মতো নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে এতে। শরীরে রোগ সৃষ্টিকারী মুক্ত কণা থেকে মুক্তি দিতে পরে আতা। এ ছাড়া কোষ্ঠ পরিষ্কার, অরুচি দূর করা, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানো ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার প্রয়োজনে আতা খাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতামতঃ
এ ফল চোখের কর্নিয়া ও রেটিনাকে সুরক্ষিত রাখে।কারণ ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ এ ফল শরীরের জন্য খুব কাজের।এ ফলে প্রচুর পরিমান ভিটামিন এ আছে ।
১ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি:
আতায় শর্করার পরিমাণ বেশি। এই ফল আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে। লালচে ও সবুজ। লালচে আতায় সবুজ রঙের আতার চেয়ে ক্যালরি ও আয়রন বেশি থাকে। কপার ও ডায়াটারি ফাইবার থাকায় এটি হজমের জন্য ভালো।আর এজন্য কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারে।
২ আতা খাবেব হৃদ্রোগের ঝুঁকিও কমানঃ
আতার মধ্যে আছে ভিটামিন বি৬, যা শ্বাসনালির প্রদাহ কমায়। ভবিষ্যতে হাঁপানি থেকে বাঁচতে চাইলে আতা খান।
আতার পুষ্টির মানঃ
আতার প্রতি ১০০ গ্রামে পুষ্টির মান নিম্নরূপ:
শক্তি | ৩৯৩ কেজে (৯৪ ক্যাল) | ||
শর্করা | ২৩.৬৪ গ্রাম | ||
ফ্যাট | ০.২৯ গ্রাম | ||
প্রোটিন | ২.০৬ গ্রাম | ||
ভিটামিন বি১ | ০.১১ এমজি | ||
ভিটামিন বি৬ | ০.২ এমজি | ||
ফোলেট | ১৪ ইউজি | ||
ক্যালসিয়াম | ২৪ এমজি | ||
ম্যাগনেসিয়াম | ২১ এমজি | ||
পটাশিয়াম | ২৪৭ এমজি |
আতা ফলের বিশেষ উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ ঃ
- আতা ফল আতা ফল হজমশক্তি বৃদ্ধি করে আতাফলে থাকা ফসফরাস খাবারের হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- এছাড়া এর খাদ্যআঁশ হজমশক্তি বৃদ্ধি করে ও পেটের সমস্যা দূর করে। তাই যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা আতা ফল খেলে অনেক উপকার পাবেন।
- রক্ত শূন্যতা দূর করে আতাফল আয়রনে পরিপূর্ণ। লোহিত রক্তকণিকা বাড়তেও সাহায্য করে আতা।তাই অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতায় যারা ভুগছেন, তাদের জন্য আতা খুব উপকারী ফল।
- হাড় মজবুত করে আতা ফলে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে যা শরীরের হাড় গঠন ও মজবুত রাখার জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই হাড় মজবুত করতে আতা ফল খাওয়া উচিত।
- রক্তাচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে আতার মধ্যে পটাসিয়াম রয়েছে। এই খনিজ উপাদানটি রক্তবাহের প্রাচীরকে রিলাক্সে রাখতে সাহায্য করে। যে কারণে রক্তচাপ ক্রমে নিয়ন্ত্রণে আসে। পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে বের করে দেয় এই ফল টি।
- ত্বক ও চুলের যত্নে আতা ফলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ন্ত্রণ করে ত্বক কে রক্ষা করে। এছাড়া ত্বকে বার্ধক্য বিলম্বিত করে এই ফলটি।এতে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং সি চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
- হৃত্রোগ প্রতিরোধ করে আতা ফলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মাংসপেশির জড়তা দূর করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাছাড়া এর পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি৬ রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- তাছাড়া আতা ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের উপস্থিতি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে, ফলে এটি শিশুদের জন্য অত্যন্ত উপকারি। সতর্কতাঃ যাদের সুগারে সমস্যা আছে তাদের হিসেব করে আতা খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিকের রোগীদের একদমই আতা খাওয়া চলবে না।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আতার উপকারিতাঃ
গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থায় আতা খাওয়ার যেমন উপকার আছে টিক তেমনি কিছু অপকার ও আছে। আমরা আগে উপকার সম্পর্কে জানব।১. সকালের অসুস্থতা হ্রাসঃ
ভিটামিন বি৬ বমি বমি ভাব এবং সকালের অসুস্থতার সংবেদন প্রতিরোধ করে।২. স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি
ফলটিতে ক্যালোরি এবং নিউরাল সুগার বেশি থাকে। সুতরাং এটি ওজন বাড়াতে সহায়তা করবে।
আর ওজন ভালে নানা রকমের সমস্যা হবে।
৩ . কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি
ডায়েটরি ফাইবার হজমতন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম করে, মলকে নরম করে এবং অন্ত্রের গতিবেগকে উন্নত করে। ডায়েটরি ফাইবার ডায়রিয়াও কমায়। (আতা ডায়রিয়া হ্রাস করতে পারে না)।৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ ওঠানামা করতে থাকে। এতে থাকা পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. স্ট্রেস হ্রাস
ম্যাগনেসিয়াম পেশীগুলি শিথিল করে এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি স্ট্রেস হ্রাস করে এবং হৃদয়কে সুরক্ষা দেয়।
৬. ভ্রূণের বিকাশ উন্নত করা
সামগ্রিক পুষ্টির উপাদানগুলি ভ্রূণের ত্বক, টেন্ডার এবং রক্তনালীগুলির বিকাশে সহায়তা করে।
৭. শরীর থেকে টক্সিন পরিষ্কার করা
ফলের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের বিষাক্ত পদার্থকে পরিষ্কার করে, তাই কিডনিগুলি সর্বোত্তম অবস্থায় রাখে। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম তৈরি করতে সহায়তা করে।
৮. অকাল প্রসব প্রতিরোধ
কপার বা তামা গর্ভবতী মহিলার জন্য প্রয়োজনীয়, কারণ তাদের ভ্রূণের সুরক্ষার জন্য কপারের ১০০ মিলি ডোজ প্রয়োজন। আতা এই তামার পরিমাণের একটি নির্দিষ্ট অংশ সরবরাহ করে। গর্ভপাতের ঝুঁকি হ্রাস করার পাশাপাশি এটি অকাল প্রসবের সম্ভাবনাও হ্রাস করে।
গর্ভাবস্থায় আতা খাওয়ার ঝুঁকিঃ
র্ভাগ্যজনক ঘটনা এড়াতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখুন:- আতার বীজ আপনার পাচনতন্ত্রকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
- যদি আপনার ঠান্ডা জাতীয় খাবারে অ্যালার্জি থাকে তবে এই ফলটি গ্রহণ না করাি ভাল।
- আতায় যেহেতু চিনির পরিমাণ বেশি, তাই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগীদের এটি সেবন করা উচিত নয়। (বা এটি সংযমে খাওয়া উচিত)।
- অতিরিক্ত ওজনযুক্ত মহিলাদের এই ফলটি খাওয়া এড়ানো উচিত (পুরোপুরি এড়াতে হবে না সংযতভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে)।
যে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিতঃ
কাস্টার্ড আপেল খাওয়ার সময় আপনি নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন:
- আতার বীজ সঠিকভাবে এড়াতে একটি চামচ দিয়ে শাঁসটি স্কুপ করে তুলে নিন।
- কাঁচা আতা খাবেন না। পাকাগুলি উজ্জ্বল সবুজ এবং স্বচ্ছ অনুভূত হয়।
- এই ফলটি খাওয়ার আগে আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
No comments:
Post a Comment